• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

অপরাধ

মির্ঝগঞ্জ থানা শিক্ষা অফিস

হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মোঃ মাসুদ হাসান, মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি, পটুয়াখালী:  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ। হিসাবরক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষকের সাথে দুর্ব্যবহার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।   

জাকির হোসেন পটুয়াখালী জেলাধীন মির্জাগঞ্জ উপজেলার ২নং মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা। সে ২০১৮ সালে নিজ উপজেলায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারি কাম ডাটাএন্ট্রি অপারেটর পদে যোগদান করে এবং পরে হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পায়।

সূত্র জানায়, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিজ গ্রামের বাড়ির জমিজমা ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছিলেন জাকির হোসেন। শিক্ষা অফিসে চাকরির পাওয়ার পর থেকে তিনি কোটিপতি হয়ে গেছেন। সুবিদখালী বন্দরে তার রয়েছে বিলাস বহুল দোতলা বাড়ি। নিজের আছে ব্যক্তিগত গাড়ি। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে তার রয়েছে জমি, প্লট ও ফ্লাট।বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে, সমিতি ও পোস্ট অফিসে নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। তার জিপিএফ ফান্ডে রয়েছে ৩১ লাখ টাকা। এ সব সম্পদ গড়তে সে ঘুষ, দুর্নীতি সহ নানাবিধ অপকর্মের আশ্রয় নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, চাহিদা মতো ঘুষের টাকা না দিতে পারলে শিক্ষকের কপালে জোটে জাকিরের দুর্ব্যবহার। এ বিষয়ে গত ১৩ আগস্ট উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক লিখিত আকারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল কবীর ও হিসাবরক্ষক  জাকিরের হোসেনের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ পাঠান। এরপর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল কবীরকে গত ৫ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।

শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি পিবিজিএসআই স্কিমের পাঁচ লক্ষ টাকার অনুদানের আবেদন গ্রহন করতে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠান প্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে একলাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছে।

বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের জন্য পরিবহন খরচের সরকারি বরাদ্দের টাকা প্রতিষ্ঠান কে না দিয়ে জাকির আত্মসাৎ করেছে। উপরন্তু সরকারি বই বিতরণের সময় জাকির প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে অফিস খরচ বাবদ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ নেন।

শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডির ডাটাএন্ট্রির পারিশ্রমিকের টাকা প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছে। শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির ডাটাএন্ট্রির অনলাইন প্রিন্টকপি অফিসে জমা নেয়ার জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা হারে ঘুষ নেয়। এছাড়াও এমপিওভুক্তির আবেদন, বিএড স্কেল, উচ্চতর স্কেল, বকেয়া বিল, এমপিও সিটের নাম কর্তন সহ যে কোন সংশোধনীর জন্য আবেদন জেলায় প্রেরণ করতে হিসাবরক্ষক জাকির কে ঘুষ দিতে হয় বিশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা।  ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় অফিস খরচ বাবদ জাকির কে ঘুষ দিতে হয় ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করতে মাধ্যম হিসেবে জাকিরকে ঘুষ দিতে হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার, পটুয়াখালী জনাব মুহাঃ মুজিবুর রহমান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বরিশাল অঞ্চলের নির্দেশে তদন্ত হয়েছে। শীঘ্রই তদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল কবীর বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে।অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক মোঃ জাকির হোসেন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads